Home Uncategorized আকাশপথে যাত্রীতে ভাটা, বন্ধ হচ্ছে ভারতগামী বহু ফ্লাইট

আকাশপথে যাত্রীতে ভাটা, বন্ধ হচ্ছে ভারতগামী বহু ফ্লাইট

by farjul
২৪ views
A+A-
Reset

বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতিদিন যেসব ফ্লাইট আসা-যাওয়া করে তার প্রায় প্রত্যেকটি এখন যাত্রী-খরায় রয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, ভারত সীমিত আকারে ভিসা কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাই যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভিসা থাকা সত্ত্বেও বিমানবন্দরে হয়রানি বা আটকের ভয়ে অনেকে ভারতমুখী হচ্ছেন না। ফলে দেশটির বিভিন্ন রুটে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

ঢাকা থেকে চেন্নাই, কলকাতা ও দিল্লি রুটে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ যাত্রীও যাচ্ছে না। কলকাতা রুটের ভাড়া এয়ারলাইন্স-ভেদে সাড়ে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট মাত্র ১২ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতায় উড়াল দিতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থায় পরিচালন ব্যয় তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো।

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ভারতের ভিস্তারা এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো। সংস্থাগুলো ঢাকা থেকে কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই ও মুম্বাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে ভারত। এরপর সীমিত আকারে ভিসা কার্যক্রম চালু করে। যদিও ভিসাপ্রাপ্তির সংখ্যা অনেক কম। তাই যাত্রী সংকটে রয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো।

ঢাকা থেকে কলকাতা, চেন্নাই ও দিল্লি রুটে ধারণক্ষমতার ৪০ থেকে ৪৮ শতাংশ যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সিটগুলো ফাঁকা যাচ্ছে। তবে, এসব রুটে ঢাকায় ফেরার সময় কিছুটা বেশি যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগে কলকাতা রুটে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। বর্তমানে এ সংখ্যা সাতে ঠেকেছে। এ ছাড়া কমেছে চেন্নাই ও দিল্লি রুটের ফ্লাইট সংখ্যাও। ফ্লাইট কমিয়েও কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাচ্ছে না তারা।

কলকাতা রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। বর্তমানে তারা ছয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। চেন্নাই রুটে সপ্তাহে ১১টি ফ্লাইট থেকে কমিয়ে পাঁচে নামানো হয়েছে

জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাত্রী সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর ভারতের ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লিসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রী সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমেছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণকারী যাত্রীরা ভিসা ইস্যুর প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না হওয়ায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় পার করছেন। অনেকে জরুরি প্রয়োজনে ভারত ভ্রমণ করতে পারছেন না। এ কারণেই ফ্লাইটে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকা থেকে কলকাতা রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করত বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ার। বর্তমানে তারা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে তিনে নামিয়েছে। এ রুটে এটিআর ৭২-৫০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে সংস্থাটি। যার ধারণক্ষমতা ৭০ জন। বর্তমানে অর্ধেক সিট ফাঁকা যাচ্ছে তাদের। তাই আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতা ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও কলকাতায় ফ্লাইট চালু করা হবে।

বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনাকারী ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলো তাদের যাত্রী সংখ্যা না জানালেও ফ্লাইটের সংখ্যা ঠিকই কমিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর এক বাসিন্দা বলেন, লিভার সমস্যায় ভুগতে থাকা আমার বোনকে ২০২২ সালে চেন্নাইয়ের ভেলোরে সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। সেখানে ট্রিটমেন্ট শেষে আবার ছয় মাস পর ফলোআপ করতে যাওয়ার নির্দেশনা নিয়ে আমরা দেশে ফেরত আসি। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে নির্ধারিত ছয় মাস পর আর যাওয়া হয়নি।

‘চলতি বছরের মে মাসে আমার বোন আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে। দেশে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি কলকাতার এক হাসপাতালে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে জুনের প্রথম সপ্তাহে ভিসার আবেদন করি। কিন্তু ভিসা রিফিউজড হয়। কয়েকদিন পর আবারও একই চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ আমার বোন ও অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে আমার স্ত্রীসহ ভিসার আবেদন করি। কিন্তু এবারও কোনো কারণ ছাড়াই ভিসা দেওয়া হয়নি। তৃতীয় দফায় গত জুলাইয়ে সিএমসির পূর্বের চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ভিসার আবেদন করি। ফের রিফিউজড হই।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকবারই যথাযথ নিয়ম মেনে সব কাগজপত্রসহ ভিসার জন্য আবেদন করি। অথচ ভিসা না দেওয়ার কারণটা পর্যন্ত আমাদের জানানো হয় না।’

বাংলাদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার পতনের পর ভারতের ভিসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সীমিত পরিসরে চালু করে জমা থাকা পাসপোর্টগুলো যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়। পাসপোর্ট ফেরত পাওয়াদের একটি বড় অংশ ভিসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। সম্প্রতি ভারত সরকার শুধু মেডিকেল ও শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা কার্যক্রম শুরু করেছে। এ অবস্থায় যারা শুধু ভ্রমণ কিংবা অন্য কাজে দেশটিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে ফ্লাইটগুলোতে যাত্রী-খরা দেখা দিয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্য দিয়ে যাত্রীদের বিমানবন্দর পার হতে হচ্ছে। বোর্ডিং পাস দেওয়া থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন এবং বোর্ডিং গেটে প্রত্যেক যাত্রীর কাগজপত্র ও পরিচয় অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা পেশাজীবী, তাদের প্রতিষ্ঠানের এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না থাকলে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদেরও জেরা করা হচ্ছে। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে যাত্রীরা আপাতত ভারতমুখী হচ্ছেন না।

এম.কে
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

You may also like

Leave a Comment

স্বতন্ত্র টিভি

আমরা শুধুই সত্যে ও নিরপেক্ষতার অঙ্গীকারে। কোনো দলের পক্ষে নয়, কোনো মতের পক্ষে নয়—আমরা তুলে ধরব শুধুই সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ এবং স্বচ্ছ বিশ্লেষণ । ‘স্বতন্ত্র টিভি’ আপনাদের মতামতের জন্য উন্মুক্ত একটি প্ল্যাটফর্ম।